মাহে মুহাররাম৷ আরবী প্রথম মাস৷ পহেলা মুহাররাম আরবী নববর্ষ৷ তবে আরবী বর্ষপঞ্জিকে শুধু আরবদের তারিখ বলে পাশ কাটিয়ে গেলে চলবে না৷ এটা মুসলিমদের জীবনাচারের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে৷ খলীফাতুল মুসলিমীন উমর রা, আরবী বর্ষ হিসাবকে হিজরী বর্ষে রূপান্তরিত করার পর হিজরী বর্ষ মুসলিমদের নিজস্ব বর্ষপঞ্জি হয়ে গেছে৷ যেহেতু আমাদের বিশেষ বিশেষ আমলের সম্পর্ক হিজরী তারিখের সাথে জড়িত, তাই হিজরী তারিখ জেনে রাখা প্রত্যেক মুসলিমের জন্যে ফরযে কেফায়া৷
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে মুহাররাম মাসে অধিক পরিমাণে রোযা রাখার উৎসাহ প্রদান করেছেন৷ হাদীসে বর্ণিত-
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «أفضل الصّيام بعد رمضان شهرُ الله المحرم» (رواه مسلم 1982).
হযরত আবু হুরায়রা রা, থেকে বর্ণিত রাসূলে আকরাম সা, ইরশাদ করেন, রামাযানের রোযার পরেই সর্বোত্তম রোযা হচ্ছে, মুহাররাম মাসের রোযা৷ (মুসলিম ১৯৮২)
রাসূলুল্লাহ সা, যখন হিজরত করে মদীনায় এলেন, তখন দেখলেন ইহুদীরা মুহাররামের দশম তারিখে রোযা রাখে৷ জিজ্ঞেস করার পর জানতে পারলেন, হযরত মূসা আলাইহিস সালাম ও বনী-ইসরাঈল ফেরাউনের আক্রমণ থেকে আল্লাহ তাআলার কুদরতের প্রত্যক্ষ নিদর্শন হিসেবে রক্ষা পাওয়া এবং কোনো বাহন ছাড়াই সমুদ্র পারি দেয়ার এবং ফেরাউন ও ফেরাউন বাহিনীকে সমুদ্রে নিমজ্জিত করার মতো অলৌকিক ঘটনার জন্যে আল্লাহ তাআলার কৃতজ্ঞতাস্বরূপ হযরত মূসা আলাইহিস সালাম এই দিবসে রোযা রেখেছিলেন৷ তাই উম্মত হিসেবে তারাও রোযা রাখে৷ তখন রাসূল সা, বললেন-
فأنا أحقُّ بموسى منكم، فصامه وأمر بصيامه (رواه البخاري 1865).
"মূসা আলাইহিস সালামের (সেই ঘটনার স্মৃতি হিসেবে) ক্ষেত্রে তোমাদের চেয়ে আমি বেশি হকদার৷ তখন হজুর সা,ও রোযা রাখলেন এবং (সবাইকে) রোযা রাখার নির্দেশ দিলেন৷ (বুখারী)
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «أفضل الصّيام بعد رمضان شهرُ الله المحرم» (رواه مسلم 1982).
হযরত আবু হুরায়রা রা, থেকে বর্ণিত রাসূলে আকরাম সা, ইরশাদ করেন, রামাযানের রোযার পরেই সর্বোত্তম রোযা হচ্ছে, মুহাররাম মাসের রোযা৷ (মুসলিম ১৯৮২)
রাসূলুল্লাহ সা, যখন হিজরত করে মদীনায় এলেন, তখন দেখলেন ইহুদীরা মুহাররামের দশম তারিখে রোযা রাখে৷ জিজ্ঞেস করার পর জানতে পারলেন, হযরত মূসা আলাইহিস সালাম ও বনী-ইসরাঈল ফেরাউনের আক্রমণ থেকে আল্লাহ তাআলার কুদরতের প্রত্যক্ষ নিদর্শন হিসেবে রক্ষা পাওয়া এবং কোনো বাহন ছাড়াই সমুদ্র পারি দেয়ার এবং ফেরাউন ও ফেরাউন বাহিনীকে সমুদ্রে নিমজ্জিত করার মতো অলৌকিক ঘটনার জন্যে আল্লাহ তাআলার কৃতজ্ঞতাস্বরূপ হযরত মূসা আলাইহিস সালাম এই দিবসে রোযা রেখেছিলেন৷ তাই উম্মত হিসেবে তারাও রোযা রাখে৷ তখন রাসূল সা, বললেন-
فأنا أحقُّ بموسى منكم، فصامه وأمر بصيامه (رواه البخاري 1865).
"মূসা আলাইহিস সালামের (সেই ঘটনার স্মৃতি হিসেবে) ক্ষেত্রে তোমাদের চেয়ে আমি বেশি হকদার৷ তখন হজুর সা,ও রোযা রাখলেন এবং (সবাইকে) রোযা রাখার নির্দেশ দিলেন৷ (বুখারী)
ইহুদিরা তো আশুরার দিনকে ঈদ হিসেবেও গ্রহণ করেছিল। খায়বারের অধিবাসীরা (ইহুদিরা) এদিন নিজ স্ত্রীদেরকে অলঙ্কারাদি ও ব্যাজ পরিধান করাত। তবে আমাদের জন্যে এদিনে বিশেষ কিছু করা, বিশেষ কিছু রান্না করা ও বিশেষ পোষাক পরাকে জরুরী মনে করা বিদআত।
মুহাররামের দশম তারিখে হযরত নূহ আলাইহিস সালাম ও সঙ্গী-সাথীদেরকে আল্লাহ তাআলা নৌকার মাধ্যমে মহা-প্লাবন থেকে রক্ষা করে জুদী পাহাড়ের চূড়ায় নোঙর করার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন৷ কৃতজ্ঞতাস্বরূপ তিনিও এই দিবসে রোযা রেখেছেন৷ (মুসনাদে আহমাদ)
যাক ঐতিহাসিকভাবে আশুরার দিবসটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ও মর্যাদার অধিকারী হয়েছে সেই আদিকাল থেকে৷ কারবালার মর্মান্তিক ঘটনা থেকে নয়৷ রাসূল সা, এর ইন্তেকালের অনেক পরে কারবালার ঘটনা সংঘটিত হয়েছে৷ অথচ ইসলামে এই দিবস মর্যাদার স্বীকৃতি পেয়েছে রাসূল সা, এর জীবদ্দশাতেই৷ কিন্তু আজ আমাদের সমাজ দ্বীনের সঠিক জ্ঞানের অভাবের কারণে আশুরার দিবসকে 'কারবালা দিবস' বানিয়ে ফেলেছে৷ এই দিনটি এলে শীয়া ধর্মাবলম্বীদের দেখাদেখি আমাদের দ্বীনি শিক্ষা-দীক্ষাহীন সমাজও বিভিন্ন অনাচারে লিপ্ত হয়ে পড়ে৷ হযরত হুসাইন রা, এর মর্মন্তুদ শাহাদাত বরণকে নিয়ে তারা যে ঠাট্টা-মশকরা করে, সত্যিকারের কোনো মু'মিনের পক্ষে এমনটা সম্ভব না৷
মুহাররাম ও আশুরায় আমাদের করণীয় হলো-
(এক) এই মাসে যথাসম্ভব বেশি করে রোযা রাখা৷ কোনো দিন-তারিখ নির্দিষ্ট করা ছাড়াই৷
(দুই) বিশেষভাবে নবম এবং দশম তারিখ রোযা রাখা৷ নবম তারিখ রোযা রাখতে না পারলে দশম এবং একাদশতম দিন রোযা রাখা৷
(তিন) কেউ যদি কারণবশত শুধু দশম তারিখ রোযা রাখতে তা-ও জায়েয আছে৷ শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহ, ইবনে হাজার হাইতামী রাহ, বলেছেন, শুধু আশুরা দিবসে রোযা রাখলে মাকরূহ হবে না৷ ঠিক তদ্রূপ প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ইউসুফ বিন্নুরী রাহ, মাআরিফুস সুনানেও এরকম বলেছেন৷
ইসলামপূর্ব যুগেও আশুরার রোযা রাখার রীতি ছিলো৷ ইহুদীরা রাখত বলে ইতোমধ্যে আলোচনা করা হয়েছে৷ যদিও ইহুদিদের সাদৃশ্য অবলম্বন থেকে আলাদা থাকার জন্যে রাসূল সা, দশম তারিখের সঙ্গে নবম তারিখেও রোযা রাখার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছিলেন৷ কিন্তু পরের বছর আর হায়াত পান নি বিধায় অতিরিক্ত আরেকটি রোযা রাখার সুযোগ পান নি৷
(এক) এই মাসে যথাসম্ভব বেশি করে রোযা রাখা৷ কোনো দিন-তারিখ নির্দিষ্ট করা ছাড়াই৷
(দুই) বিশেষভাবে নবম এবং দশম তারিখ রোযা রাখা৷ নবম তারিখ রোযা রাখতে না পারলে দশম এবং একাদশতম দিন রোযা রাখা৷
(তিন) কেউ যদি কারণবশত শুধু দশম তারিখ রোযা রাখতে তা-ও জায়েয আছে৷ শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহ, ইবনে হাজার হাইতামী রাহ, বলেছেন, শুধু আশুরা দিবসে রোযা রাখলে মাকরূহ হবে না৷ ঠিক তদ্রূপ প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ইউসুফ বিন্নুরী রাহ, মাআরিফুস সুনানেও এরকম বলেছেন৷
ইসলামপূর্ব যুগেও আশুরার রোযা রাখার রীতি ছিলো৷ ইহুদীরা রাখত বলে ইতোমধ্যে আলোচনা করা হয়েছে৷ যদিও ইহুদিদের সাদৃশ্য অবলম্বন থেকে আলাদা থাকার জন্যে রাসূল সা, দশম তারিখের সঙ্গে নবম তারিখেও রোযা রাখার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছিলেন৷ কিন্তু পরের বছর আর হায়াত পান নি বিধায় অতিরিক্ত আরেকটি রোযা রাখার সুযোগ পান নি৷
হযরত হুসাইন রা, এর কারবালা প্রান্তরে শাহাদাতের কথা স্মরণ করে বর্তমানে যা কিছু করা হচ্ছে, যেমন: মাতম, বুক চাপড়ানো, মাথায়-মুখে আঘাত করা, শরীর রক্তাক্ত করা, হায় হুসাইন! হায় হুসাইন বলে আবেগ জাহির করা, শোক মিছিল, তাজিয়া মিছিল করা; এসবকিছু মানুষের সৃষ্টি করা রসুম, কুসংস্কার ও হারাম কাদছে কুরআন-সুন্নায় এর কোনো ভিত্তি নেই৷ কোনো সাহাবী থেকেও এসমস্ত কাজের সমর্থন পাওয়া যায় না৷ শীয়া সম্প্রদায় এসব মনগড়া রসুম চালু করেছে৷ আর তাদের দেখাদেখি সাধারণ মুসলিমদের মধ্যেও এসব চালু হয়ে গেছে৷ হযরত হুসাইন রা, কেন? যেকোনো মৃত ব্যক্তিকে উপলক্ষ করে, স্মরণ করে প্রতি বছর শোক পালন করা শরীয়তসম্মত নয়৷ তাই এসব বিদআত, কুসংস্কার থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেক মু'মিনের জন্যে একান্ত কর্তব্য৷
কারবালা দিবস পালন নয়, কারবালার চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে কুফরী শক্তির বিরুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয়ের লক্ষে প্রস্তুতি গ্রহণ করাই হচ্ছে সময়ের দাবি৷ আমাদের ফিলিস্তিনি ভাই-বোনদের সাহায্যার্থে এগিয়ে যাওয়া এখন ঈমানের দাবি৷ হায় শীয়া বন্ধুগণ! কারবালা কারবালা বলে জীবন পার করে দিলা, কিন্তু কারবালার চেতনায় ফিলিস্তিন ও আল-আকসার মুক্তির কোনো চিন্তাই তোমাদের মাঝে পরিলক্ষিত হয় না৷ উম্মতের প্রতি দরদ ও ভালোবাসাই তো নবী পরিবারের প্রতি ভালোবাসার নামান্তর৷ পুরো উম্মতই তো নবী পরিবার৷ নবী পরিবারের প্রতি ভালোবাসার অর্থই হচ্ছে, উম্মতের প্রতি ভালোবাসা৷ ভেতরে উম্মতের ভালোবাসা নেই মানে নবী পরিবারের প্রতিও ভালোবাসা নেই৷ যা দেখানো হয় সব কৃত্রিম ও মেকি ভালোবাসা৷
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন