রবিবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৫

সাগর পাড়ে এক বুড়ো জেলে বাস করতো।

সাগর পাড়ে এক বুড়ো জেলে বাস করতো। সে ছিলো অত্যান্ত গরীব ও সৎ। তার স্ত্রী ছিলো তার একমাত্র সঙ্গী। জেলে প্রতিদিন সাগরে মাছ ধরে তার জীবিকা নির্বাহ করতো। একদিন জেলে সাগরে মাছ ধরতে গেলো। সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে গেলো। জালে মাছের দেখা নেই। বুড়ো ভগ্ন মনে শেষ বারের মতো জাল ফেললো। 
:
জাল তুলতেই বুড়ো খুশিতে বাগবাগ। সুন্দর সোনালি একটি মাছ উঠেছে জালে। এবার মাছ মায়াবি কণ্ঠে বুড়োকে বললো, হে মানব ! তুমি আমাকে ছেড়ে দাও! বিনিময়ে তুমি যা চাইবে আমি তা তোমাকে দিবো। মাছের কথা শুনে বুড়োর মনে মায়া হলো। জলের মাছকে জলেই ছেড়ে দিলো।
:
বুড়ো খালি হাতে ঘরে ফিরে এলো। স্ত্রীকে খুলে বললো সব। শুনেই রেগে গেলো বুড়ি ! এটা কোনো কাজ করলে? হাতের ঝুড়িটা বহুদিন হলো ভেঙ্গেছে! একটা ঝুড়ি তো অন্তত মাছের কাছে চাইতে পারতে। যাও!! একটা ঝুড়ি দিতে বলো!! বুড়ো সাগর পাড়ে গিয়ে মাছকে ডাকলো। মাছ এসে হাজির হলো কিনারে।
: বলো কী চাই তোমার !
: আমার কিছু চাই না। বুড়ির একটা ঝুড়ি চাই। যাও! ঘরে যাও! পেয়ে যাবে।
বুড়ো ঘরে এলো। দেখলো বুড়ি সুন্দর একটি ঝুড়ি নিয়ে বসে আছে। বুড়োকে দেখেই রেগে গেলো বুড়ি। একটা ঝুড়ি চাইতে বললাম, তাই নিয়ে ফিরে এলে? মাছকে গিয়ে বলো, আমার কোঠা বাড়ি চাই। জলদি যাও !!
:
বুড়ো সাগর পাড়ে এসে মাছকে ডাকলো। মাছ এসে হাজির হলো কিনারে। বলো কী চাই তোমার ! বুড়ির কোঠা বাড়ি চাই। দিবে ?
: ঘরে যাও পেয়ে যাবে। বুড়ো ফিরে দেখলো কোঠা বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে বুড়ি গায়ে হাওয়া লাগাচ্ছে।
বুড়োকে দেখেই আবারো রেগে গেলো বুড়ি। মাছকে বলো আমি জমিদারি চাই। আমার বহু চাকরানী থাকবে। পাইক-পেয়াদা থাকবে। জলদি যাও!! বুড়ো মন খারাপ করে সাগর পাড়ে এলো। মাছকে ডাকলো। মাছ এলো তীরে। বলো কী চাই তোমার?
: বুড়ির জমিদারি চাই। চাকর-চাকরানী চাই। পাইক-পেয়াদা চাই। শান্তিতে বসতে দিচ্ছে না ঘরে।
: ফিরে যাও পেয়ে যাবে। বুড়ো বাড়ি ফিরে নিজের বাড়িই চিনতে পারছে না। চারদিকে ঝকঝক তকতক করছে। বাড়ির গেটে দারোয়ান দাঁড়ানো। বুড়োকে ঢুকতে দিচ্ছে না বাড়িতে। বুড়ো বললো, আমি বুড়ির স্বামী আমাকে ঢুকতে দাও। দারোয়ান অনুমতি চাইলো। বুড়ি বললো, ধাক্কা মেরে গেট থেকে তাড়িয়ে দাও বুড়োকে। দারোয়ান তাই করলো। বুড়ো মনের দুঃখে পাহাড়ে চলে গেলো।
:
কিছুদিন পর। বুড়োকে ধরে আনতে সৈন্য পাঠালো বুড়ি। ধরে আনা হলো বুড়োকে।
: মাছকে গিয়ে বলো। হতে চাই সাগরের একমাত্র অধিশ্বরী, একচ্ছত্র রাণী। মাছ হবে আমার সেবাদাস।
বুড়ো বারণ করলো এমন আবদারে। ফলে মালকিনের অবাধ্যতার কারণে পেয়াদা কয়েক ঘা বসিয়ে দিলো বুড়োর পিঠে। বাধ্য হয়ে বুড়ো সাগর পাড়ে এসে মাছকে ডাকলো। মাছ জানতে চাইলো কী চাই? খুলে বললো বুড়ো। মাছ শুনে লেজ নাড়িয়ে হারিয়ে গেলো সাগরের অতলে। আর ফিরে এলো না। বেলা শেষে বুড়ো বাড়ি এসে দেখলো, বুড়ি সেই পুরণো বাড়িতে ভাঙ্গা ঝুড়ি নিয়ে জীর্ণ পোষাকে বসে আছে ।
:
দৃশ্যপট-[দুই]
:
বাংলাদেশ স্বাধীন হলো জাতীর জনকের অবদানে। তিনি একটা সোনার মাছ হাতে পেলেন। দেশ আর জনগন সেই সোনার মাছ। এবার শুরু হলো একের পর এক আবদারের তুফান। তাঁর পর তাঁর রত্ন (?) কন্যা। প্রথমে বললো, শুধু সেবা করার সুযোগ চাই। এরপর পিতৃ হত্যার বদলা চাই। এরপর যুদ্ধাপরাধীর বিচার চাই। বিরোধী দল মুক্ত বাংলা চাই। ইসলাম মুক্ত স্বদেশ চাই। নির্বাচনহীন পাওয়ার চাই। সকল খাতে ভ্যাট চাই। জনগনের মুণ্ডু চাই। যে কোনো মূল্যে গদি চাই। শুধু চাই সব চাই। আরো চাই আরো চাই।
:
জনগন নামক সোনার মাছ সব দিয়েই যাচ্ছে। একটা সময় হয়তো আসবে যখন সেই ভাঙ্গা ঝুড়ি আবার হাতে তুলে দিবে জনগন................। সেদিন হয়তো বেশী দূরে নয়। আছি সেই সুদিনের প্রতিক্ষায়...........।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন